পঞ্চতত্ত্ব¡/ তত্ত্ব নিরূপন

নাম গ্রহণে হয় শুদ্ধ ভক্তি যোগ, এই পরম ধর্ম্ম অন্য শুধু কর্ম ভোগ।

১।    ভক্ত রূপ--------------স্বয়ং শ্রী গৌরাঙ্গ
২।    ভক্ত স্বরূপ ------------শ্রীনিত্যানন্দ
৩।    ভক্তাবতার-------------শ্রীঅদ্বৈত্যাচার্য্য
৪।    ভক্ত শক্তি -------------শ্রী গদাধর দামাধর রামানন্দ
৫।    শুদ্ধ ভক্ত---------------শ্রী বাসাদি ।
শ্রীগৌরাঙ্গঃ-
শ্রীরাধার ভাব, কান্তি, বিলাস নিয়ে অবর্তীন। শ্রীরাধার প্রণয় মহিমা কিরূপ? শ্রী রাধীকা যে প্রেমের মাধুর্য্য ও মহত্ত্ব কিরূপ ? আমাকে অনুভব করিয়া রাধীকার যে সুখ হয় তাহাই বা কিরূপ? এই তিন বিষয়ের আশ্বাদন করিতে অভিলাশ করিয়া শ্রীরাধিকার কোমনীয় ভাব ও মধুর অমল কান্তি গ্রহণ করিয়া শ্রীশচীদেবীর গর্ভরূপ সমূদ্রে হরিরূপ চন্দ্র আর্বিভূত হইয়াছেন। অর্থাৎ ভক্ত রূপ ও গৌর বর্ণ হইয়াছেন। এখানে প্রশ্ন হতে পারে এত ভক্ত থাকতে শ্রীকৃষ্ণ শ্রীরাধারই ভাব ও শক্তি নিয়ে আবির্ভূত হলেন কেন ? আনন্দ দায়িনী শক্তির সার  যে প্রেম সে প্রেমের সারভাব এবং সেই ভাবের সারাংশ মহাভাব। মহাভাব স্বরুপিনী এই শ্রীরাধীকাতেই দাস্যরতির সেবা সখ্যরতির প্রীতি, বাৎসল্য  রতির  স্নেহ এবং শান্তিরতির ঈশ্বরানুরাগ সহমধুর রতির শ্রেষ্ঠত্ব সমন্বিত হয়ে আছে চিরকাল। এই শ্রীরাধিকার ভাব গ্রহণ করে তিনি নিখিল ভক্ত রাজির ভাবই গ্রহণ করতে চেয়েছেন। ব্রজে যেমন কৃষ্ণের সমান কেহ নাই। হ্যাঁ তবে এক বস্তুু আছে তাহলো তার নাম। ভগবান বলেছেন আমি হতে আমার নাম বড়। ব্রজে শ্রীরাধার সমান কেহ নাই। তবে একজন তার সমান প্রায়, তিনি সখি চন্দ্রাবলী। রাধা সর্বদা অধিতা পাশাপাশি রাখলে  শ্রীরাধা  মধু স্নেহ ও চন্দ্রাবলী ঘৃত: স্নেহ দুই সুস্বাদু  ও বলদায়ক পার্থক্য এই ঘৃত শুধু শুধু খাওয়া যায় না অন্যের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হয়। মধু শুধু শুধু খাওয়া যায় আবার অন্যের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। শ্রী রাধা মদিয়তাময় ভাব চন্দ্রাবলির তদিয়তাময় ভাব। মদিয়তাময় ভাবে রাধা ভাবেন কৃষ্ণ আমার আর কাহারো নয়। তদিয়তাময় ভাবেন আমি কৃষ্ণের এবং আমার মত অনেক দাসী কৃষ্ণের আছেন। রাধারানী কৃষ্ণকে না পেলে মান করেন। চন্দ্রাবলি কৃষ্ণকে না পেলে অকৃতার্থ মনে করেন, তার মানে অধিকার নেই। (মাথুর বিরহ অর্থাৎ শ্রী কৃষ্ণ মথুরায় গমণ হেতু গোপি গণের যে বিরহ) মাথুরের তীব্রতম বিরহে শ্রী রাধারাণী চন্দ্রাবলীকে কাছে এনে মনোভাব প্রকাশ করেন, এভাবে সখিরে আমার এ দেহেতে আর প্রাণ থাকবে না। তাই আমার প্রাণনাথকে তোর হাতে দিয়ে যাব তোর সেবায় প্রাণ ভল্লব সুখে থাকবেন। হঠাৎ ভাবলেন, কি করে শ্যামকে দিব শ্যামতো কাছে নেই আবার ভাবলেন শ্যাম না থাকলে কি তার নামতো আছে । নাম আর নান্মী ভিন্ন নয়। তাই চন্দ্রবলীর কর্ণে কৃষ্ণ নামই দিলেন।

চৈতন্য চরিতামৃতে নিত্যানন্দঃ-
শ্রী মহাপ্রভূর প্রসিদ্ধ সহচর নিমাইয়ের সঙ্গি নিতাই। বৈষ্ণবের মধ্যে অবদুত নামে পরিচিত। ত্রেতা যুগে যিনি ছিলেন শ্রীরামের লন, দ্বাপরে যিনি হয়েছিলেন কৃষ্ণের বলরাম, কলিতে তিনি হয়ে এলেন গৌরের নিতাই। চৈতন্যের আর্বিভাবের  প্রায় ১২ বৎসর আগে মাঘি শুকা ত্রয়োদশীতে বীরভূম জেলার একচক্র গ্রামে ব্রাহ্মন কূলে তার জন্ম । পিতার নাম হাড়াই পন্ডিত বা হাড়াই উঝা। মাতার নাম পদ্মাবতী দেবী, অল্প বয়সে মাধবেন্দ্র পূরীর সাথে তীর্থ ভ্রমণে বেরিয়ে অবশেষে বোম্বাই প্রদেশার্ন্তগত পান্ডার পুর তীর্থে লপিতি নামে একসাধু পুরুষের কাছে  মন্ত্র গ্রহণ করেন ।

শ্রী অদ্বৈত্যাচার্য্যঃ--

    সব থেকে ও কিছু নাই এমন চরম দুর্দিন থেকে বাঁচিয়েছেন প্রাণের ঠাকুর গৌর সুন্দর আর তাকে পৃথিবীতে টেনে এনেছিলেন আর এক মহাপুরুষ শান্তি পুরের শ্রীল অদ্বৈত্য গোস্বামী।
    অদৈত্য প্রভূ ভাবলেন, কলির জীবকে উদ্ধারিতে প্রভুকে আনতে হবে শ্রী গদাধর নিমাইয়ের দিবানিশি সাথী। তিনি নিমাইয়ের সেবা করেন, কিন্তুু কিছু চাওয়ার সাহস নাই। একদিন কীর্ত্তনান্তে শেষ করিয়া রাত্রে উভয়ে শয়ন করিলে তখন গদাধর নিমাইয়ের পাঁ ধরিয়া কান্দিয়া বলেন, ত্রিজগৎ উদ্ধার হইয়া গেল। আমি কি একাই কৃষ্ণ প্রেম হইতে বঞ্চিত থাকিব। নিমাই হাসিয়া বলিলেন আচ্ছাতুমি পাবে। কল্য প্রত্যুষে গঙ্গা স্নান করিলেই কৃষ্ণ প্রেম পাইবে। গদাধরের আনন্দে আর নিদ্রা হইল না। ভোরে গঙ্গাস্নান করিলেন, তথা চৈতন্য মঙ্গলে,
অতি হৃষ্ট মনে স্নান করি গঙ্গাজলে ।
প্রেমায় অবস তনু টল মল করে ॥
শ্রীবাস ঃ-

    একদিন বেলা দুই‘টার সময় শ্রীবাস ঠাকুর ঘরের দরজা বন্ধ করিয়া তাহার ভজনিও বস্তুু শ্রীনৃসিংহদেবের ধ্যান করিতেছেন। এমন সময় কে আসিয়া ঠাকুর ঘরের দরজায় আঘাত করিয়া বলিল শ্রীবাস দ্বার খোল। শ্রীবাস বিরক্ত মনে জিজ্ঞাসা করিলেন কে তুমি? বাহির থেকে উত্তর এলো তুমি যাকে ধ্যান করিতেছো। এই কথা শুনিয়া দ্বার খোলে দেখতে পেলেন নিমাই পন্ডিত ঘরে প্রবেশ করিয়া বিষ্ণুখট্টায় যে শালগ্রাম ছিলেন। তাহা এক পার্শ্বে সরাইয়া উহার উপরে বসিলেন। তাহার সর্ব্বাঙ্গ থেকে এত তেজঃ বাহির হইতেছে যে, উহা যেন সূর্য্যের তেজকে খর্ব্ব করিতেছে। শ্রীবাস স্তম্ভিত, নিমাই বলিলেন শ্রীবাস আমি যাচ্ছি তুমি আমাকে অভিষেক কর। নিমাইকে দেখিয়া এই আমি যে.   শ্রী ভগবান শ্রীবাস তাহাই বুঝিলেন .

0 comments:

Post a Comment