ছোট গল্পরাখাল ছেলে কলিম
প্রতিদিনের মত কলিম আজও যাচ্ছে গরু চড়াতে মাঠে। কিন্তু তার মন আজ অন্য রকম। সকাল বেলায় ঘুম থেকে জেগে নামাজ আদায় করল কলিম, নামাজ শেষ করে একটু শুয়ে পড়ল থাকল। ফারহাদ চৌধুরীর স্ত্রী তাকে ডাক দিলেন কলিম কলিম। হঠাৎ চমকে উটল কলিম। জবাব দিল জি চাচী। তাড়া তাড়ি এসো। নাস্তা করে গরু ছাড়। আরও একটু দেরি হল কলিম আসতে। আবার সাজেদা ডাকলেন। কলিম জবাব দিল আসতাছি। এদিকে ফারহাদ চৌধুরী রাগে ছুটে আসলেন। কলিম তুমি কি শুন না। তোমাকে এতন ধরে ডাকা হচ্ছে। কলিম চুপ চাপ করে এসে ড্রাইনিং রোমে ঢুকল।

হাত মুখ ধুয়ে খাওয়ার জন্য প্রস্তুত হল। ফারহাদ সাহেবের স্ত্রী সাজেদা ধমক দিয়ে বলল কখন তোমাকে ডাক দিলাম আর তুমি এখন আসছ। তাড়া তাড়ি খাওয়া দাওয়া করে গরু নিয়ে যাও। কলিম কোন কিছু না বলে চুপ চাপ ভাত খায়। কিন্তু কলিমের ভেতর যেন সাগরের ঢেউ খেলছে। চোখের পানি টলমল করছে। কলিম খাওয়া দাওয়া শেষ করল। প্রতি দিনের মতো বাশি গামছা সঙ্গে নিল। গরু নিয়ে মাঠে চলল। সামন দিকে হাটে আর গামছা দিয়ে চোখের পানি মুছে। মাঠে গরু ছাড়ে ভর দুপুরে মাঠের এক কোনে বসে থাকল রাস্তার পাশে একটি ইজল গাছের নিচে। মনে তার খুব কান্ত ভাব। গামছা দিয়ে হাত মুখ মুছলো। কোমর থেকে বাশি বের করল। এদিকে পানির খুব পিপাসা হল। গাছের নিচে পানির কোন সুযোগ নাই। মাঠের পশ্চিম পার্শে ছোট একটি গর্ত আছে। সেখানে গিয়ে কিছু ময়লাযুক্ত পানি পান করল। গাছের নিচে এসে বাশিটা হাতে নিল। মুখে বাশি লাগিয়ে চিকন সুরে বাশি বাজায় আর চুখ থেকে পানি পড়ে বুক ভেসে যায়। এমন সময় হঠাৎ একজন বৃদ্ধা লোক রাস্তা দিয়ে হেটে চলে। তিনি কলিমের কাছে এসে বাশির সুর শুনে চুখের পানি দেখে থেমে গেলেন। কলিমের গায়ে হাত দিয়ে বললেন বাবা তুমি তোমার বাশির সুরটা একটু বন্ধ রাখ। কলিম চমকে উটে জি করল। চাচা আপনি কে? বাবা আমাকে তুমি চিনবে না। আমার নাম শফিক মিয়া। আমার বাড়ি এই যে, সামনের গ্রামে। আমি আমার ছেলে নাতনী সবাইকে নিয়ে ঢাকা শহরে বাসায় থাকি। আমার নাতনীরা স্কুলে লেখাপড়া করে। কলিম লেখা পড়ার কথা শুনে যেন তার মনটা চমকে উঠে। কলিমের চোখের পানি যেন আরও বেগে ছুটতে শুরু করে। বুড়ো লোক কলিমকে প্রশ্ন করেন বাবা তুমি বাশির সুরে কি বল আর চোখ দিয়ে পানি পড়ে তোমার মনের কথাগুলো আমাকে বলবে। একপর্যায়ে তিনি অনুরোধ শুরু করলেন। কলিম ধীরে ধীরে তার সব মনের কথা বলা শুরু করলো। চাচা আমার যখন ১২বছর বয়স তখন আমার পিতা আমাকে রেখে তিনি মারা যান। আমার আরও একটি ছোট বোন আছে তার বয়স তখন মাত্র ২বছর। মা অসুস্থ্য থাকেন সবসময়। আমরা উপাস থাকি প্রায় সময়। বোন খালি পেটের ভোকে কান্দে। আমার আব্বা যখন মারা যান তখন আমি কাস সিক্সে পড়তাম। কিন্তু আমার আম্মা আমাকে পড়া শুনার চেষ্টা করলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যার্থ হলেন। চাচা আজ আমি অল্প বয়সে অন্যের ঘরে চাকুরী করি। আমার পড়তে খুব ইচ্ছে করে। বাড়ির মালিক আমাকে পড়তে দেয়না শুধু গরু রাখায়। কলিম এইসব বলে আর হাউ মাউ করে কাদে।

0 comments:

Post a Comment